বাংলাদেশে নার্সিং পেশা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে দক্ষ নার্সের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই পেশা তরুণদের কাছে একটি আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারি নার্সিং কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং প্রক্রিয়া পালন করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা ২০২৫ সালের জন্য সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তির যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় নথি, ভর্তি পরীক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নার্সিং কোর্সের ধরন
বাংলাদেশে সরকারি নার্সিং কলেজগুলোতে প্রধানত দুই ধরনের কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়:
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি: এটি ৩ বছর মেয়াদি একটি কোর্স, যা নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
- বিএসসি ইন নার্সিং: এটি ৪ বছর মেয়াদি একটি স্নাতক কোর্স, যা আরও উন্নত এবং বিস্তৃত নার্সিং শিক্ষা প্রদান করে।
এই দুই কোর্সের জন্য ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন। নিচে আমরা বিস্তারিতভাবে এই যোগ্যতাগুলো আলোচনা করছি।
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারির জন্য যোগ্যতা
২০২৫ সালে সরকারি নার্সিং কলেজে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য নিম্নলিখিত শিক্ষাগত এবং অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে।
- এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার মোট জিপিএ কমপক্ষে ৬.০০ হতে হবে।
- বিগত ৩ বছরের (২০২২, ২০২৩, ২০২৪) যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
- লিঙ্গভিত্তিক বণ্টন: মোট আসনের ২০% ছাত্র এবং ৮০% ছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত।
- বয়সসীমা: প্রার্থীর বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে। সরকারি নার্সিং কলেজে বয়সসীমা কঠোরভাবে মানা হয়।
- স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা: প্রার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। চোখের দৃষ্টিশক্তি, রক্তচাপ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করা হয়।
বিএসসি ইন নার্সিং-এর জন্য যোগ্যতা
বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তির জন্য আরও কঠোর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। ২০২৫ সালের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো নিম্নরূপ:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- প্রার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
- এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-এর যোগফল ন্যূনতম ৭.০০ হতে হবে।
- এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো ক্ষেত্রেই জিপিএ ৩.০০-এর নিচে গ্রহণযোগ্য হবে না।
- বিগত ৩ বছরের (২০২২, ২০২৩, ২০২৪) এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
- বয়সসীমা: সাধারণত ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা: ডিপ্লোমা কোর্সের মতোই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা প্রয়োজন।
ভর্তি পরীক্ষা
সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তির জন্য প্রার্থীদের একটি প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষায় সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়:
- জীববিজ্ঞান: এইচএসসি সিলেবাসের জীববিজ্ঞান বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন।
- ইংরেজি: বেসিক গ্রামার, শব্দভাণ্ডার এবং বোধগম্যতা।
- সাধারণ জ্ঞান: স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং পেশা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কিত প্রশ্ন।
ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। প্রার্থীদের পরীক্ষার সিলেবাস এবং পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলন করা উচিত।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
ভর্তির সময় প্রার্থীদের নিম্নলিখিত নথিপত্র জমা দিতে হবে:
- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ এবং মার্কশিট।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- ৩-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় সনদ (যেমন: নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ)।
ভর্তি প্রক্রিয়া
সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়:
- অনলাইন আবেদন: বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (BNMC) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
- ভর্তি পরীক্ষা: নির্ধারিত তারিখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
- মেধা তালিকা প্রকাশ: পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়।
- ভর্তি: মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করেন।
নার্সিং পড়াশোনার সুবিধা
নার্সিং পড়াশোনা শেষে প্রার্থীরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পান। এর মধ্যে রয়েছে:
- সরকারি হাসপাতাল: সরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি।
- বেসরকারি হাসপাতাল: বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজের সুযোগ।
- বিদেশে ক্যারিয়ার: মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে নার্সদের জন্য ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কেন সরকারি নার্সিং কলেজ বেছে নেবেন?
সরকারি নার্সিং কলেজে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং শিক্ষার মান উচ্চ। এছাড়া, সরকারি কলেজ থেকে পাস করা নার্সদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাছাড়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ এবং ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ বেশি থাকে।
উপসংহার
২০২৫ সালে সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের উপরোক্ত যোগ্যতা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব। নার্সিং একটি সম্মানজনক এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা, যা শুধুমাত্র আর্থিক স্বাধীনতাই নয়, সমাজে অবদান রাখার সুযোগও দেয়। তাই, আগ্রহী প্রার্থীদের এখনই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত।